ওয়াসার পানির দাম নির্ধারণ পদ্ধতি কেমন হবে?

প্রতি ইউনিট (১০০০ লিটার) পানি উৎপাদনে ২৫ টাকা খরচ করে ঢাকা ওয়াসা। এই পানি আবাসিক সংযোগে ১৫.১৮ টাকা ও বাণিজ্যিক লাইনে ৪২ টাকা হারে বিক্রি হয়। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে সরকারি সংস্থাটি। এজন্য সরকারকে দিতে হচ্ছে ভর্তুকি। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করতে চায় ওয়াসা। এজন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইডের সহযোগিতায় একটি গবেষণাও শেষ হয়েছে। রবিবার (১৭ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে সেই গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এটি যৌথভাবে সম্পন্ন করেছে ঢাকা ওয়াসা ও ওয়াটার এইড।

ওয়াটার এইডের কারিগরি উপদেষ্টা মো. তাহমিদুল ইসলাম গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, ঢাকায় অভিজাত এলাকা ও বস্তিবাসী সবাই সরকারি ভর্তুকির পানি ব্যবহার করছে। আবার যারা বেশি পানি ব্যবহার করেন (অভিজাত), আর যারা কম করেন (বস্তিবাসী) তারা একই দামে পানি পেলে সাম্য প্রতিষ্ঠা হয় না। এজন্য তারা ওয়াসার সহযোগিতায় ঢাকায় গৃহকর, জমির মৌজা মূল্য ও গ্রাহকদের আর্থিক সক্ষমতা আমলে নিয়ে পানির দামকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করে একটি গবেষণা করেছেন।

তারা উচ্চস্তরে প্রতি ইউনিট পানির মূল্য ৩৭ টাকা, উচ্চ মধ্যম স্তরে ৩১.২৫ টাকা, মধ্যম স্তরে ২৫ টাকা, নিম্ন মধ্যম স্তরে ১৮.৭৫ টাকা, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১২.৫০ টাকা, বাণিজ্যিক ও শিল্পের জন্য ৫০ টাকা এবং সরকারি ও সাধারণে ব্যবহৃত সংযোগের জন্য ২৫ টাকা রেখেছেন। গবেষণায় ঢাকা ওয়াসার ৩.১১ লাখ সংযোগের মধ্যে ৪২ ভাগ সংযোগের তথ্য আমলে নেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ওয়াসার উচ্চ স্তরের গ্রাহক সংখ্যা ০.৮ শতাংশ, উচ্চ মধ্যম স্তরের ১.৩ শতাংশ, মধ্যম স্তরের ৪ শতাংশ, নিম্ন মধ্যম স্তরের ৭৯.৪ শতাংশ, নিম্ন স্তরের ২.৯ শতাংশ, বাণিজ্যিক ও শিল্পের ১১.৫ শতাংশ এবং সরকারি ও সাধারণে ব্যবহৃত সংযোগ ০.১ শতাংশ রয়েছে।

পানির দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে মো. তাহমিদুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনও বাসার ফ্লাটের আয়তনের সঙ্গে জোনের স্কোরের সঙ্গে গুণ হবে। যেকোনও এলাকার যেকোনও আবাসিক ভবনের গড় আয়তনের সঙ্গে এই এলাকার জোন স্কোরের সঙ্গে গুণ হবে। জোন স্কোর হিসাব করা হবে একটি নির্দিষ্ট এলাকার জমির মৌজা মূল্যে, গৃহকর ও বসবাসকারীদের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায়। বীজগাণিতিক উপায়ে এ তিন বিষয়ের ওপর আলাদা আলাদাভাবে ঢাকা ওয়াসার ১০টি জোনের কোথায় কোথায় উচ্চ ও কোথায় নিম্ন স্কোরের জোন হয় তা নির্ধারন করা হয়েছে। এরকম আমরা ৯৫টি এলাকার জন্য স্কোর নির্ধারণ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা জমি যদি পাঁচ কাঠা হয়, তার ভবনের আয়তন হবে ৬২ ভাগ এবং সেখানে যদি একটি ছয়তলা ভবন থাকে এবং পাঁচটি ফ্ল্যাট থাকে তাহলে ফ্ল্যাটের গড় আয়তন ১,০২১ বর্গফুট। এখন বাড়িটি যদি লালবাগে হয় তাহলে পড়বে ঢাকা ওয়াসার জোন-২ এর আওতায়। সেখানে জোন স্কোর হচ্ছে ০.৭ এবং ওই বাড়ি নিম্ন মধ্যবিত্ত স্তরে পড়বে। সেটার আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম পড়বে ১৮.৭৫ টাকা।

‘আমি যদি লালবাগে বড় বাসায় থাকি তাহলে আমি ইনকাম গ্রুপে ওপরের দিকে যাবো। একইভাবে যদি বনানীতে একটি ছোট বাসায় থাকি তাহলেও আমাকে কম চার্জ দিতে হবে।’ ঢাকা ওয়াসার জোন-৫ গুলশান, বনানী, কাওরানবাজার বেশি স্কোর ধরা হয়েছে। আর জোন-১, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গেন্ডারিয়ার মতো এলাকা কম স্কোর ধরা হয়েছে। এ সিস্টেমের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় অনেকগুলো অ্যাপার্টমেন্ট আছে যেখানে একটি সংযোগ আছে। মোহাম্মদপুর, জাপান গার্ডেন সিটিতে এক সংযোগে একশ ফ্ল্যাট। এমন অনেক ধরনের সমস্যা আছে। নিম্ন আয়ের মানুষের একটি সংযোগ থেকে ১০-৮০টি বাসায় সংযোগ গেছে। আবার আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ পাওয়া যায় একই ভবনে। আবার জরুরি সেবাগুলোও ওয়াসার সংযোগে যুক্ত।’ তিনি আরও জানান, গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী মধ্যম আয়ের মানুষ পানির উৎপাদন খরচের সমান দাম দেবে। আর তাদের থেকে ২৫ ভাগ বেশি দেবে উচ্চ মধ্যবিত্ত। তাদের চেয়ে আরও ২৫ ভাগ বেশি দেবে উচ্চবিত্তরা। অপেক্ষাকৃত ধনীদের বাদ দিয়ে দরিদ্রদের ওয়াসার পানির দামের ভর্তুকির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এতে ওয়াসার ৪২ ভাগ সংযোগ থেকে আয় আসে বর্তমানে ৬০ কোটি টাকা আর এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করলে আসবে ৮০ কোটি টাকা। শতভাগ এলাকা ধরলে আসবে ১৮৪ কোটি টাকা। বছরে আসবে ২,২০০ কোটি টাকা। বিপরীতে ঢাকা ওয়াসার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় দুই হাজার কোটি টাকা। ঢাকা ওয়াসার ব্যস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেছেন, পানির উৎপাদন ও বিক্রয় খরচ সমন্বয় করতে এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করতে চাইছেন তারা। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ করে এ দাম কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাংলা ট্রিবিউন

primetvbd_primetvbd

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *