দ্রুত ধনী হতে রাজধানীতে বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে চলছে কথিত স্বামী-স্ত্রীর ভয়ঙ্কর ফাঁদ। বিথী-সাইফুল নামে কথিত এই দম্পতির পাতা ফাঁদের মূল টার্গেট হচ্ছে- নিঃসঙ্গ ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, বয়স্ক এবং তালাকপ্রাপ্ত বা ডিভোর্সিরা। কৌশলে তাদের বিভিন্ন নম্বর দিয়ে আগে থেকে ঠিক করে রাখা নারীদের ব্যবহার করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভাড়া করা ফ্ল্যাটে নিয়ে আসা হয়। এরপর ঠিক করে রাখা কমবয়সী নারীদের সঙ্গে একই কক্ষে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইল করে ইনস্টলমেন্টে বিভিন্ন ধাপে ধাপে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আদায় করে চক্রটি। পরিবারের সদস্য, অফিস, প্রতিবেশীদের কাছে গোপনে ধারণকৃত ভিডিও ফাঁস হওয়ার ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি এমনই এক চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। স্বামী-স্ত্রীসহ চক্রের অন্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। সূত্র জানায়, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীতে যৌনতার ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এমন একাধিক চক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। স্বামী-স্ত্রীর এই চক্রটি ২০১৩ সাল থেকে ৮-৯ বছর ধরে কৌশলে নারী সদস্যদের দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এ কাজ করে আসছে।গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অর্থ উপার্জনের শর্টকাট পথ হিসেবে এবং সহজেই জামিন পাওয়ার সুযোগ থাকায় চক্রের সদস্যদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। প্রতারক সাইফুলের একাধিক কথিত স্ত্রী রয়েছে।
প্রতারণার মাধ্যমে সাইফুল ও বিথী স্বামী-স্ত্রী সেজে অভিনয় করতো। সাইফুলের বিরুদ্ধে এই মামলা ছাড়াও আরও ৭টি এবং তার কথিত স্ত্রী বিথীর বিরুদ্ধে ৩টি মামলা আছে বলে সিডিএমএস পর্যালোচনা করে জানা গেছে। ফাঁদে ফেলে একজন ভিকটিমের কাছ থেকে ভিন্ন বিকাশ নম্বরে ৭০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে চক্রটি। সম্প্রতি চক্রের কাছে প্রতারণার স্বীকার এক ভিকটিম বাদী হয়ে প্রতারক দম্পতির বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় মামলা করেন। মামলার পর তারা দুবাই গিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। সাইফুলের আরও স্ত্রীর সন্ধান মিলেছে বলে জানায় গোয়েন্দা সূত্র। নিঃসঙ্গ পুরুষকে প্রলুব্ধ করে সম্পর্কে জড়ায় চক্রের নারী সদস্যরা। এক পর্যায়ে একান্তে সময় কাটায়। পরে ভুক্তভোগীকে আটকে রেখে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। ভিডিও ধারণের পর করা হতো ব্ল্যাকমেইল। মান-সম্মান খোয়ানোর ভয়ে টাকা দিতে বাধ্য হন ভুক্তভোগীরা। কথিত দম্পতি সাইফুল ও বিথীর মতো আরও একাধিক চক্রের সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, প্রতারণার ব্যবসা চালাতেই মূলত সাইফুল-বিথী নামের কথিত এই দম্পতি স্বামী-স্ত্রী সেজে প্রতারণা এবং অভিনয় করে ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে তারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় বাসা ভাড়া নিয়ে প্রতারণা করতো। বেশি দিন এক বাসায় থাকতো না। আইন সংস্কারের মাধ্যমে জামিন ব্যবস্থা রুদ্ধ করতে পারলে এ ধরনের ভয়ঙ্কর প্রতারণা কমে আসবে বলে জানিয়েছেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।