২৪ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কীভাবে খালাস হলো বিদেশি মদ?

ভুয়া ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করা হয় চীন থেকে আনা দুই কনটেইনার বিদেশি মদ। এসব মদ আমদানি করা হয়েছিল সুতা ও মেশিনারি পণ্য ঘোষণা দিয়ে। ভুয়া আইপি ব্যবহার করে এসব মদের চালান খালাস করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, বন্দর থেকে এ চালান বের করা পর্যন্ত সব ধাপেই নেওয়া হয়েছিল জালিয়াতির আশ্রয়। বিষয়টি জানাজানির পর টনক নড়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। র‌্যাবের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে জব্দ করা হয় মদভর্তি দুটি কাভার্ডভ্যান। সেইসঙ্গে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মদের চালানে প্রায় ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। জব্দ করা চালান দুটি শতভাগ পরীক্ষা শেষে রবিবার (২৪ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, চালান দুটিতে এক হাজার ৩৩০ কার্টনের ভেতর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩১ হাজার ৬২৫.৫ লিটার বিদেশি মদ পাওয়া যায়। যার আনুমানিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য চার কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পণ্য চালান দুটিতে মিথ্যা ঘোষণায় ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি চালানে ছিল ১৬ হাজার ১১৭ দশমিক ৫ লিটার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ। ওই একটি চালানে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং জড়িত রাজস্ব প্রায় আট কোটি ৪৩ লাখ টাকা। কাস্টমস সূত্র জানায়, আইপি জালিয়াতি করে কুমিল্লা ও ঈশ্বরদী ইপিজেডের দুটি পৃথক প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে টেক্সটার্ড ইয়ান, মেশিনারি ও ববিন ঘোষণায় চালান দুটি খালাস করা হয়। এর মধ্যে গত ২০ জুলাই কুমিল্লা ইপিজেডের হেশি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের নামে চীন থেকে টেক্সটার্ড ইয়ান ঘোষণায় আসা ১৯ হাজার ৬৫০ কেজি ওজনের পণ্য এবং একই দিন ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেডের নামে চীন থেকে আসা রোভিং মেশিন ও ববিন ঘোষণায় ২০ হাজার ৭৫০ কেজি ওজনের পণ্য খালাসে পৃথকভাবে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেছিল। প্রতিষ্ঠান দুটির সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল ডবলমুরিং থানার ৬৯৯ কেবি দোভাষ লেনের জাফর আহমেদ।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর আসে শুক্রবার (২২ জুলাই) রাত ৯টায় মদভর্তি দুটি কনটেইনার খালাস হবে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) টিম অনুসন্ধান করে জানতে পারে, চালান দুটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বের হয়ে গেছে। এরপর কাভার্ডভ্যান নম্বর ট্র্যাক করে গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাব ও হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় গাড়ি দুটি সোনারগাঁ থেকে আটক করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমসের এআইআর শাখার ডেপুটি কমিশনার সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিথ্যা ঘোষণায় এবং ভুয়া আইপি ব্যবহার করে মদ আমদানি করা হয়। বন্দর থেকেও এ চালান বের করা হয়েছিল নানা জালিয়াতির মাধ্যমে। এগুলো স্ক্যানিংযোগ্য পণ্য। অথচ স্ক্যানিং না করেই ভুয়া স্ক্যানিং পেপার জমা দিয়েছিল। যে স্ক্যানিং পেপারে কাস্টমস কর্মকর্তার ভুয়া স্বাক্ষর ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি কোনও সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। এ ঘটনা তদন্তে কাস্টমস কমিশনারের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শেখ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ভুয়া আইপি ব্যবহার করে এসব মদের চালান আমদানি করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ২৪ ও ৬টা ২৫ মিনিটে বন্দরের ১ নম্বর গেট দিয়ে মদভর্তি চালান দুটি ডেলিভারি করা হয়। চালানের আইপি আইডি যাচাই করে দেখা যায়, ওই আইপি জাল। ভুয়া আইপি ব্যবহার সত্ত্বেও কীভাবে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, স্ক্যানিং ও গেট ফাঁকি দিয়ে কীভাবে পণ্য চালান দুটি খালাস হলো এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হবে।’ র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, ‘শুক্রবার রাতে তথ্য পাই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিয়ারভর্তি দুটি কনটেইনার ঢাকায় আসছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহজনক গাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। পরে কনটেইনার দুটি আটক করা হয়। এ নিয়ে কাস্টমসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কাস্টমসের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের উপস্থিতিতে কনটেইনার দুটি খোলা হয়। এ সময় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ পাওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুটি চালানের একটিতে সুতা এবং অপরটিতে মেশিনারি লেখা ছিল। ট্যাক্সের কোনও কাগজ আমরা পাইনি। এখন পর্যন্ত আমরা দুই জনকে গ্রেফতার করেছি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ গ্রেফতারকৃতরা হলেন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার নাগেরহাটের মৃত শেখ জয়নুল আবেদীনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩২) ও শ্রীনগরের ষোলঘর ভুইচিত্র এলাকার মো. আক্কাস মোল্লার ছেলে মো. নাজমুল মোল্লা (২৩)।

primetvbd_primetvbd

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *