বিশেষ প্রতিনিধি,
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চট্টগ্রামে ডিজেলচালিত গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। শনিবার (৬ আগস্ট) সকালে নগরীতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম গণপরিবহন চলতে দেখা গেছে। বন্ধ রয়েছে ডিজেলচালিত বাস। তবে ৩ ও ৪নং রোডসহ অন্যান্য রোডে সিএনজিচালিত গণপরিবহন চলতে দেখা গেছে। বিআরটিসির বাসও চলছে। এছাড়া সিএনজিচালিত হিউম্যানহলার ও অটোরিকশা চলছে।
নগরীর কাজির দেউড়ী, ওয়াসা, লালখাবাজার মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত গন্তব্যের বাসের অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। বাস পেয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে নগরবাসীদের।
মো. সবুজ চট্টগ্রামের টেকনিক্যাল এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। শনিবার সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রামের ওয়াসা এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ৮ নম্বর বাসের জন্য। কিন্তু ১৫ মিনিট দাঁড়িয়েও বাস পাননি তিনি।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর ফলে রাস্তায় বাসের পরিমাণ কম। গ্যাস দিয়ে চলে এমন বাসই চলাচল করছে। ফলে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেও টেকনিক্যাল মোড়ে যাওয়ার কোন বাস পাইনি।
ওয়াসা মোড়ে কথা হয় মো. রিয়াজ নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ১৫ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু টেকনিক্যাল এলাকায় যাওয়ার কোনো বাস পাইনি। সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারলে অফিসেও ঝামেলা করবে। যত সমস্যা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের।
চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ী এলাকায় কথা হয় ৩নং রোডের বাসের যাত্রী মো. সালামের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্যাসের গাড়িগুলো চালছে। এখনও বাড়তি ভাড়া নেয়নি। আমি আগের ভাড়া দিয়েই জিইসি মোড় থেকে কাজির দেউড়ী এলাম।
৩নং রোডের বাসের হেলপার হৃদয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়েনি। তাই আমারা আগের ভাড়াই গাড়ি চালাচ্ছি। তবে জ্বালানি তেল দিয়ে চলে এমন গণপরিবহন নগরীতে বন্ধ রয়েছে।
শুক্রবার রাতেই আজ সকাল থেকে গণপরিবহন না চালানোর ঘোষণা দিয়েছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ। মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নগরীতে জ্বালানি তেলে চলে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবে সিএনজিচালিত গণপরিবহন চলাচল করছে।
তিনি বলেন, আমাদের সমিতির অধীনে নগরীতে সাতশর মতো বাস চলাচল করে। এর মধ্যে পাঁচশর বেশি বাস তেলে চলাচল করে।
গতকাল (শুক্রবার) রাতেই আজ থেকে গণপরিবহন চলবে না বলে জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন।
বেলায়েত হোসেন বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে রাতে পেট্রোল পাম্পগুলো তেল দেয়নি। সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এত দাম দিয়ে জ্বালানি কিনে একই ভাড়ায় আমাদের পক্ষে গাড়ি চালানো সম্ভব না। কারণ তেলের দাম বাড়ার ফলে যা ভাড়া আসবে তার সব টাকা পেট্রোল পাম্পে দিয়ে আসতে হবে। এতে করে শ্রমিকের বেতনও হবে না, গাড়ির কিস্তিও হবে না। এই কারণে গাড়ি না চালানোটাই ভালো।
তিনি বলেন, তেলের দাম বাড়িয়েছে কিন্তু বাস ভাড়া বৃদ্ধির কোনো ঘোষণা দেয়নি সরকার। ফলে সকাল থেকে গাড়ির চালক ও হেলপার যদি যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে যায়, তখন যাত্রীদের সঙ্গে মারামারি, হাঙ্গামা হবে। এর থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা ভালো। তাই চট্টগ্রাম নগরীতে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা থেকে ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের পুনর্নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, লিটারপ্রতি অকটেন ১৩৫ টাকা ও লিটারপ্রতি পেট্রোল ১৩০ টাকা করা হয়। এতদিন কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা প্রতি লিটার ও পেট্রোল ৮৬ টাকা প্রতি লিটারে বিক্রি হচ্ছিল।