স্টাফ রিপোর্ট
অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত ‘ইউনূস এনভায়রনমেন্টাল হাব’ কলম্বিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ৩০টি সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলেছে এবং এই ব্যবসাগুলোকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ১০টি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আমাজনের জঙ্গলে। আমাজনের ক্রমাগতভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বনাঞ্চলের বনায়নসহ এলাকায় চক্রাকার অর্থনীতি গড়ে তোলা এই ব্যবসাগুলোর মূল উদ্দেশ্য।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কলম্বিয়ার আমাজন জঙ্গলে কাজ করছে, এমন কিছু সামাজিক ব্যবসা পরিদর্শন করলেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইকুয়েডরের সীমান্তের নিকটবর্তী এই এলাকাটি কলম্বিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে তিনি স্থানীয়দের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনা, কর্মসূচিগুলোর বহুমুখীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমাজন রেইনফরেস্ট কলম্বিয়ার মোট ভূমির প্রায় অর্ধেকজুড়ে বিস্তৃত। শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পর এই এলাকায় বিরোধের অবসান হলে ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক উদ্যোগে এই রেইনফরেস্টে বৃক্ষনিধন পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। কলম্বিয়ার নতুন সরকার এই বনভূমির আরও বিনাশ রোধ করতে এবং একে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে সরকার সবেমাত্র তার কাজ শুরু করেছে। দেশটির নতুন ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিয়া মারকুয়েজ একজন নিবেদিতপ্রাণ পরিবেশবাদী, যিনি অবৈধ খনি খননের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে সরাসরি সংগ্রাম করে আসছেন।
অধ্যাপক ইউনূস যে এলাকাটি পরিদর্শন করলেন, তার নাম ‘কেকোয়াতা’। এলাকাটি ফ্রাকের (রেভল্যুশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়া) সদর দফতর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। শান্তিচুক্তির পর এলাকায় কোনও সুস্পষ্ট শাসনব্যবস্থা না থাকায় বন ধ্বংসের প্রক্রিয়া চুক্তি-পূর্ব সময়ের চেয়ে বরং আরও খারাপ হয়েছে। এলাকার গরিব মানুষ বেঁচে থাকার প্রয়োজনে নির্বিচারে গাছ কাটছে, অটেকসই উপায়ে জমি চাষ করছে। আর কোম্পানিগুলো বনের গভীরে গিয়ে পরিবেশ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিস্থিতির কথা বিবেচনা না করে বন উজাড় করছে এবং বনাঞ্চল ও মাটির যথেচ্ছাচার ব্যবহার করছে।
সামাজিক ব্যবসাগুলোর একটি ‘আমাজনিয়া এমপ্রেনদ্রে’ বা ‘এই ফ্লোরেন্সিয়া’ থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে রেইনফরেস্টের পাহাড়ি এলাকায় গভীর জঙ্গলে অবস্থিত। অধ্যাপক ইউনূস দুজন সামাজিক ব্যবসা উদ্যোক্তা জুলিও আন্দ্রে ও জুলিয়া হেরনেন্দেজের অতিথি হয়ে তাদের কাজ দেখতে গিয়েছিলেন। তারা দুজনেই সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ফ্রাংফুর্টের কাছে ওয়েজবাডেনে অবস্থিত ইউনূস এনভায়রনমেন্টাল হাবের সহযোগিতায় সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টি ও পরিচালনায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তাদের এই সামাজিক ব্যবসাগুলোয় তারা ১৮ হাজার গাছ ও চারা রোপণ করেছেন। এগুলো স্থানীয় ১ হাজার ২৮৫টির মধ্যে ৪৭ প্রজাতির। এই সামাজিক ব্যবসাটি সরকারের কাছ থেকে ৩০ হেক্টর জমির লাইসেন্স নিয়ে তা পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করে এবং ব্যবসাটির কর্মকাণ্ড ১ লাখ হেক্টর জমিতে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। ফ্রাকের অধীনে থাকাকালে এই এলাকায় কেউ প্রবেশ করতে পারতো না এবং কোনও পুনরুদ্ধারকাজও তখন সম্ভবপর ছিল না। সামাজিক ব্যবসাটি একই সঙ্গে হুলবিহীন মৌ চাষ (মেলিপোনিক কালচার অব স্টিংলেস বিস) নিয়েও কাজ করছে, যা আমাজনের অন্যতম প্রাচীন এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বিবর্তিত চাষগুলোর একটি, যা এই এলাকায় ব্যাপক হারে বৃক্ষনিধনের কারণে এখন প্রায় হারিয়ে গেছে।
‘এই ফ্লোরেন্সিয়া’ সামাজিক ব্যবসা হিসেবে বন পুনরুদ্ধারে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান দিতে ব্যক্তি ও উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে একটি অরণ্য বিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করছে। এখানে কয়েক দিন ধরে প্রশিক্ষণ চলে। প্রশিক্ষণার্থীদের হোস্টেল হিসেবে তৈরি করা ব্যক্তিগত তাঁবুতে রাত যাপন করতে হয়।
অংশগ্রহণকারীদের একাকী রাত কাটাতে হয়, যাতে তারা অরণ্যের রাত ও ভোরের শব্দের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। অধ্যাপক ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের ‘এই’ তাদের প্রক্রিয়াগুলোর মধ্য দিয়ে নিয়ে যায় এবং তাদের কিছু প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান প্রদর্শন করে।
ইউনূস তাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটান এবং তাদের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনা, কর্মসূচিগুলোর বহুমুখীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসা হিসেবে বনায়নের মাধ্যমে এলাকার মানুষের আয়ের সুযোগ সৃষ্টি, মধু, ফল ও অন্যান্য বনজ দ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং স্থানীয় মানুষকে বাজারজাতকরণ ও আর্থিক সেবাগুলো প্রদান বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান।
পরিদর্শন শেষে অধ্যাপক ইউনূস এলাকার তিনটি স্থানে আমাজন পুনরুদ্ধার, যার ওপর শুধু কলম্বিয়া বা ল্যাটিন আমেরিকা নয়, বরং সমগ্র পৃথিবী নির্ভরশীল, তার প্রতি সমর্থন ও প্রতিশ্রুতির চিহ্ণ হিসেবে কেকেও চারা রোপণ করেন। এরপর প্রফেসর ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত বেলিন ডে লস অ্যান্ডাকিসে ইসাবেলা গনজালেজ ও তার ২৩ জন নারী সহ-সদস্য পরিচালিত দ্বিতীয় সামাজিক ব্যবসা ‘আয়াকুনা’ পরিদর্শনে যান।