ভারতকে বাদ রেখে বাংলাদেশসহ ১৯ দেশের সঙ্গে চীনের বৈঠক

পিটিআইয়ের রিপোর্ট

ভারতকে বাদ রেখে বাংলাদেশসহ ১৯ দেশকে নিয়ে চায়না-ইন্ডিয়ান ওশিন রিজিয়ন ফোরাম অন ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশনের মিটিং সম্পন্ন করেছে চীন। ওই মিটিংয়ে ভারতকে আমন্ত্রণও করা হয়নি। এ খবর দিয়েছে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই। এতে বলা হয়, স্পষ্টতই ভারতের অনুপস্থিতিতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৯টি দেশকে নিয়ে এ সপ্তাহে মিটিং করেছে চীন। এর আয়োজক ছিল চায়না ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি (সিআইডিসিএ)। এটি হলো এমন একটি সংগঠন যা চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত। গত ২১শে নভেম্বর এই মিটিং হয়। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এতে অংশ নিয়েছে ১৯টি দেশ। পিটিআই লিখেছে, চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে ‘শেয়ারড ডেভেলপমেন্ট: থিওরি অ্যান্ড প্রাকটিস ফ্রম পারস্পেকটিভ অব দ্য ব্লু ইকোনমি’ শীর্ষক থিমের অধীনে এ মিটিং হয়েছে হাইব্রিড পদ্ধতিতে। যে ১৯ টি দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিয়েছেন তারা হলো বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান, ইরান, ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তাঞ্জানিয়া, সিসিলি, মাদাগাস্কার, মৌরিতিয়াস, জিবুতি, অস্ট্রেলিয়া।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন তিনটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে জানেন এমন সূত্রমতে, মিটিংয়ে ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এর আগে গত বছর কোভিড-১৯ এর টিকা সহযোগিতা বিষয়ে ভারতের অংশগ্রহণ ছাড়াই দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশকে নিয়ে মিটিং করেছে চীন। সিআইডিসিএ’র প্রধান লুও ঝাওহুই। তিনি চীনের সাবেক উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতে নিযুক্ত চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত। সংগঠনটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তিনি সিআইডিসিএ-এর সিপিসি (ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি চায়না) লিডারশিপ গ্রুপের সেক্রেটারিও। এই সাইট অনুযায়ী, তাদের উদ্দেশ্য হলো বৈদেশিক সহায়তা, সহযোগিতা, বড় রকমের বৈদিশিক সহায়তার বিষয়ে পরামর্শ দেয়া, বৈদেশিক সহায়তায় জড়িত বিষয়ে সংস্কারে অগ্রগতি, বড় সব কর্মসূচি শনাক্ত করা, সুপারভাইজ করা এবং তার বাস্তবায়নকে মূল্যায়ন করা।
এ বছর জানুয়ারিতে শ্রীলংকা সফরের সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর উন্নয়নে একটি ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন। ওয়াং ই যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সিআইডিসিএর বৈঠক কি সেটাই? এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিডিয়ার কাছে পরিষ্কার করেছেন, ২১শে নভেম্বরের মিটিং ওই প্রস্তাবের অংশ নয়। সিআইডিসিএ’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীন এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সামুদ্রিক দুর্যোগ প্রতিরোধ এবং সহযোগিতা কৌশল সহজ করার বিষয়কে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। প্রয়োজন হলে এসব দেশকে আর্থিক, বস্তুগত ও প্রযুক্তিগত সমর্থন দিতে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে চীন।
পিটিআই আরও লিখেছে, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা সহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের বন্দর এবং অবকাঠামোতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা করছে চীন। দেশের বাইরে প্রথমে জিবুতিতে পূর্ণাঙ্গ একটি নৌঘাঁটি স্থাপন করে চীন। শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে বেইজিং। এছাড়াও তারা আরব সাগরে পাকিস্তানের গোয়েদার বন্দর নির্মাণ করছে। এই বন্দরটি ভারতের পশ্চিম উপকূলের ঠিক পশ্চিমে। এ ছাড়া মালদ্বীপে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করেছে চীন। ভারত সমর্থিত ইন্ডিয়ান ওশিন রিম এসোসিয়েশনে (আইওআরএ) সদস্য ২৩টি দেশ। এই সংগঠন শক্তিশালী শিকড় গেঁড়েছে। সেখানে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের প্রভাবের পাল্টা হিসেবে দৃশ্যত চীন এমন ফোরাম করার লক্ষ্য স্থির করেছে। ১৯৯৭ সালে গঠিত আইওআরএ-এর ডায়ালগ পার্টনার চীন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নে ২০১৫ সালে একটি পর্যবেক্ষক হয়ে ওঠে আইওআরএ।
আইওআরএ ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন’ (এসএজিএআর) প্রস্তাব করেন। এর উদ্দেশ্য ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলীয় দেশগুলোর মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা। ভারতীয় নৌবাহিনীর সমর্থনে গঠিত ‘ইন্ডিয়ান ওশিন নেভাল সিম্পোজিয়াম’ (আইওএনএস) চাইছে এ অঞ্চলের নৌবাহিনীগুলোর মধ্যে সামুদ্রিক বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে। ২০২০ সালের জুনে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনা সদস্যদের মধ্যে সংঘাতের পর থেকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে মারাত্মক আঘাত লেগেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শান্তি ও স্থিরাবস্থা বজায় রাখছে ভারত। চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক অগ্রগতির জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ। – মানব জমিন।

Md Ismat Toha

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *