আজ আমি আমাদের জাতীয় লজ্জার কথা জানাব। আপনারা কি জানেন যে ৮ম শ্রেণী পাশ সরকারি অফিসে চাকুরী করা একজন ড্রাইভার পায় ১২তম গ্রেডে বেতনভাতা। আর ঐদিকে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষকরা (যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক বা তার উপরে) পায় ১৩ তম গ্রেডে বেতনভাতা যা মাসে মাত্র ১১০০০ টাকা। এই শিক্ষকরা বছরে দুটি বোনাসসহ পায় ১১০০০X ১৪=১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। বছরে সর্বসাকুল্যে পায় ১৫৪০০০ টাকা। আমাদের দেশের মাথাপিছু গড় আয় যেন কত? আমাদের মাথাপিছু গড় আয় হলো ২ হাজার ৫৯১ ডলার বা ২ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা যা একজন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের ১ বছরের বেতন ভাতা থেকে ৬৫ হাজার টাকা বেশি। তাহলে কাদের আয়ে আমাদের মাথাপিছু আয় এত বেশি? অথচ প্রাথমিকের শিক্ষকরাই জাতি গঠনের ভিত্তিটা গড়ে দেন। অথচ কি অবজ্ঞা, কি অবহেলা, কি অসম্মানই না আমরা তাদের দেই।
আরো লজ্জার কথা বলি। প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষককে দৈনিক টিফিন ভাতা কত টাকা দেয় জানেন? দৈনিক তারা ৬ টাকা ৬৬ পয়সা টিফিন ভাতা পায়। আরে এই পরিমান টাকা আজকাল একজন ভিক্ষুককে দিলেও সেতো সেটা নিবেই না উল্টো মনে মনে গালি দিবে। অথচ সরকার বলে তারা নাকি শিক্ষার উন্নতির জন্য অনেক কিছু করছে। শুধু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক না। সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতনের, সুবিধার এবং সম্মানের একইরকম হাল। শুধু শিক্ষকরাই না। শিক্ষার্থীদেরও একইরকম হাল করে রেখেছে। অথচ গাল ভরে বুলি আওড়ায় শিক্ষাই নাকি জাতির মেরুদন্ড। ভারতের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনের চেয়ে অনেক বেশি। অথচ ভারতে জীবনযাত্রার ব্যয় আমাদের চেয়ে কম। একই কথা বলা চলে বিশ্বলবিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। একটি সময় ছিল যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বেতন বেশি। যার জন্য সত্যেন বোস, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষের মত শিক্ষকরা কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। বেতন ম্যাটার্স।
বাংলাদেশের সরকারেরা কতটা শিক্ষা বান্ধব তার স্বাক্ষর শিক্ষার সর্বস্তরের পরতে পরতে। শিক্ষায় বরাদ্দ দেখুন। ইউনেস্কো বলে একটি দেশকে সভ্য হতে হলে সেই দেশের জিডিপির অন্তত ৫.৫% শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া উচিত। যুগ যুগ ধরে আমাদের কত বরাদ্দ দেয়? ১.৮% থেকে ২.১%! এইটাই প্রমান করে শিক্ষাকে আমাদের সরকারেরা কতটা অবহেলা করে। অথচ শিক্ষাই হতে পারতো আমাদের জাতি গঠনের সোপান বা সেরা পথ। তাহলে কিভাবে বলব আমরা যেই সরকার এই পর্যন্ত পেয়েছি তারা দেশপ্রেমিক? তারা জাতিকে গড়তে চেয়েছে। চুরি চামারি, ঘুষ দুর্নীতির করার জন্য এই দেশে অর্থের অভাব হয়না কিন্তু শিক্ষায় বরাদ্দ ও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির কথা উঠলেই টাকা নাই।
লেখক: কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক, ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়