অনেকের বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা আদালতের, বাংলাদেশ ব্যাংকেরও সতর্কতা

স্টাফ রিপোর্টার

ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারীদের দেশ [ সম্প্রতি আদালত এ ধরনের বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে আটক হয়েছেন নিউইয়র্কের আবুল কাশেম। তিনি একটি ব্যাংকের অনুমতি পেয়েছেন। এ ছাড়া আরও কিছু ব্যাংক খেলাপির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে আদালত ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শুধু দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেই হবে না। দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বাতিল ও সম্পত্তি ক্রোক করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মো. জাকির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকগুলো চাইলে আদালতের মাধ্যমে সব ঋণখেলাপির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যবস্থা করতে পারে।
জানা গেছে, শীর্ষ ঋণখেলাপি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী গ্রুপ ইলিয়াছ ব্রাদার্সের পরিচালক আমিনুল করিম ও নুরুল আবছারের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালত। ঢাকা ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ২৫ মে এই আদেশ দিয়েছেন। ঋণখেলাপি আমিনুল করিম ও নুরুল আবছার দুই ভাই। আমিনুল করিমের কাছে ব্যাংকের পাওনা ঋণ সুদ-আসলে ১০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ঋণের বিপরীতে উপযুক্ত কোনো সম্পত্তি বন্ধক নেই বলেও ব্যাংক আদালতকে জানিয়েছে।
২৩৪ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলায় চট্টগ্রামের পাঁচ ব্যবসায়ীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। চলতি বছরের ১৬ মে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন। ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীরা হলেন- সীতাকুণ্ডের শীতলপুর অটো স্টিল মিলসের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম উদ্দিন, পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, জানে আলম ও মাহবুব আলম। ওয়ান ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ২৩৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেনি ওই ব্যবসায়ীরা। আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন, ঋণের বিপরীতে যে সম্পত্তি ব্যাংকে বন্ধক আছে, তা অতি সামান্য। এ অবস্থায় তারা দেশ ছাড়লে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। এর আগে গত ৫ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গ্রান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজের এমডি মোয়াজ্জেম হোসেন ও তার স্ত্রী পরিচালক সাদিকা আফরিন এবং আশিকুর রহমানকে ১৭৫ কোটি টাকা খেলাপের অভিযোগে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন অর্থঋণ আদালত। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইমিগ্রেশন শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক মো. মুজাহিদুর রহমান।
এদিকে ২১ জুন মধ্যরাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আমেরিকা যাওয়ার সময় নিউইয়র্ক প্রবাসী আবুল কাশেমকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন পাওয়া পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান। কিন্তু অনুমোদনের আগে ব্যাংকের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দেননি আবুল কাশেম। ব্যাংকের পরিচালক বানানোর কথা বলে এসব অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। সেই টাকায় আবুল কাশেম গুলশানে ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি কিনেছেন। পরিচালক হওয়ার জন্য আবুল কাশেমকে টাকা দিয়েছেন ই-কমার্স কোম্পানি আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম শিকদার। তিনি প্রায় ৩ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও পণ্য দেননি। এসব গ্রাহকদের আবেদনের ভিত্তিতে তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় গত ৩১ মে আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম শিকদার, এমডি ও মঞ্জুর আলমের স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী এবং আলেশা মার্টকে মোটরসাইকেল সরবরাহকারী এস কে ট্রেডার্সের মালিক মো. আল মামুন ও পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুন।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, মামলার পর ওই চারজন যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় তথ্য পাঠানো হয়। আর এ তথ্যের ভিত্তিতেই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আমেরিকা যাওয়ার সময় আবুল কাশেমকে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করেছে। অন্যরা পলাতক। তারা বহু গ্রাহকের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের জন্য অগ্রিম অর্থ নিয়ে পণ্য বা টাকা ফেরত না দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং অপরাধ করছে।
আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৮ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশনে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০১৫ সালে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৯টি মামলা করে দুদক। মামলা দায়ের করার প্রায় ৮ বছর পর গত ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ ১৪৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনকে আসামি করে চার্জশিট অনুমোদন করে দুদক। গত ১৫ জুন আবদুল হাই বাচ্চুর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশেন, ল্যান্ড অ্যান্ড সি পোর্ট) বরাবর চিঠি দেয় দুদক।
জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আবদুল হাই বাচ্চু। আর তখনই ব্যাংকটির দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর শাখা থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়াসহ নিয়ম না মেনে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ১২০ জনকে আসামি করা হয়। পরে ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আরও তিনটি মামল

Md Ismat Toha

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *