আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
নিউইয়র্কজুড়ে ৪৩ ইঞ্চি বরফের স্তর। আটকে আছে গাড়ি। গাড়ির ভেতরে ঠান্ডায় জমে মরে পড়ে আছে মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে যারা গাড়ি থেকে পালাতে চেয়েছিল মেলেনি শেষ রক্ষা।
কেউ মরে পড়ে আছে নিজ গাড়ির পাশেই। কোথাও কোথাও আবার বরফের স্তূপেও সন্ধান মিলেছে লাশের। বড়দিনে যুক্তরাষ্ট্র যেন মৃত মানুষের হিমাগারে পরিণত হয়েছে। সোমবার দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ জন। যার মধ্যে নিউইয়র্কেই ১৭ জন মারা যায়। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
সূত্র-সিএনএন, রয়টার্স, এপি।
এক যুগে একবার দেখা মেলে এই ঝড়ের। নৃশংসতম ঝড় কেবল যুক্তরাষ্ট্রবাসীর বড়দিন কেড়ে নেয়নি, নিয়েছে ৩৯ নিরীহ প্রাণ। লাখ লাখ মানুষকে রেখেছে বিদ্যুৎহীন, হার কাঁপানো ঠান্ডায় আর অন্ধকারে।
নিউইয়র্ক শহরকে পরিণত করেছে বরফের কবরে। রোববার ভোরের তীব্র তুষারপাতে ১৭.৩ ইঞ্চি থেকে ৪৩ ইঞ্চি পুরু শুভ্র প্রাণনাশী বরফের পাহাড়ে চাপা পড়ে গেছে গোটা শহর। ২০০০ সালের পর এই প্রথম এমন বরফ দেখল নিউইয়র্ক।
বৃহস্পতিবার থেকে ঠান্ডার কারণে কলোরাডো স্প্রিংসে দুটি মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজনকে একটি ভবনের পাওয়ার ট্রান্সফরমারের কাছে পাওয়া গেছে। খুব সম্ভবত তিনি খানিকটা উষ্ণতার খোঁজেই সেখানে গিয়েছিলেন। আরেকটা লাশ পাওয়া যায় আশ্রয়কেন্দ্রের গলিতে। কানশাসে বৈরী আবহাওয়ায় ট্রাফিক দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়। শুক্রবার এই খবর নিশ্চিত করে কানশাস হাইওয়ে টহল পুলিশ। কেনটাকি রাজ্যে তিনজন মারা যায়। অঞ্চলটির কর্মকর্তারা জানায়, এর মধ্যে একজন মন্টগোমারি কাউন্টিতে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে। মিসৌরিতে একটি ক্যারাভান বরফের রাস্তা থেকে একটি জমাটবাঁধা গর্তে ঢুকে পড়ে। এতে একজন মারা যায় বলে নিশ্চিত করেছে কানশাস সিটি পুলিশ। ওহাইওতে ঝড়ো বাতাসের সময় নয়জন মারা যায়। টেনেসিতে একজন।
উইসকনসিন স্টেট পেট্রোল বৃহস্পতিবার শীতের আবহাওয়ার কারণে একটি মারাত্মক দুর্ঘটনার খবর দেয়। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানায়, পশ্চিম নিউইয়র্কে নিহত ১৩ জনের মধ্যে বাফেলোতে ছয়জন, আমহার্স্টে একজন, চেকটোওয়াগায় তিনজন এবং লকপোর্টে একজন রয়েছে। এছাড়া লকপোর্ট শহরের একটি বাড়িতে চুল্লি ভারী তুষারে ঢেকে যাওয়ার পর কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার ঘটনায় একজন নিহত হন। জানা যায়, বাফেলো এবং আশপাশের এলাকায় নিহতদের বয়স ২৬ থেকে ৯৩-এর মধ্যে। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হ্যাচুল জানায়, এটি বাফেলোর দীর্ঘ ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী ঝড়। তুষারপাত ও তুষার ঝড় রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য করে তুলেছে। বিদ্যুৎ সাবস্টেশনগুলোও হিমায়িত হয়ে গেছে। ঘন ‘লেক ইফেক্টের’ কারণে পশ্চিম নিউইয়র্ক তুষারে ডুবে গেছে।
যখন গ্রেট লেকের উষ্ণ পানির ওপর দিয়ে হিম শীতল ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয় তখন লেক ইফেক্ট তৈরি হয়। শত শত বরফ সরানোর গাড়ি ও উদ্ধারকর্মী বড়দিনে তুষারে আটকে থাকা গাড়ি জরুরি পুনরুদ্ধারে পাঠানো হয়। উদ্ধারকর্মীদের গাড়িও বরফে আটকে যায়। আটকে যাওয়া ১১টি অ্যাম্বুলেন্স রোববার উদ্ধার করা হয়। নিউইয়র্কে উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য শত শত ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়। রাজ্য পুলিশ রোববারের মধ্যে ৫০০টিরও বেশি উদ্ধারকর্ম পরিচালনা করে।